ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানিতে ভাসছে দেশের উত্তরাঞ্চল, ভয়াবহ রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে ঢাকার দিকে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৫৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৭
  • ১৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বন্যাপরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সর্বগ্রাসী বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয়।

গতকাল বন্যার পানি বেড়েছে ১৪ জেলায়, কমেছে শুধু পঞ্চগড় জেলায়। পানি বাড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা ব্যারাজ। ডালিয়া পয়েন্টে জারি রয়েছে রেড অ্যালার্ট। রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের সঙ্গে। সরকারি হিসাবেই গতকাল সোমবার পর্যন্ত ২০ জেলায় বন্যায় পৌনে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যাজনিত কারণে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 তবে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বন্যাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ১৬ জন, লালমনিরহাটে ৭, কুড়িগ্রামে ৬, নীলফামারীতে ১, জয়পুরহাটে ১, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ১, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ১ ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।

দুর্গত জেলাগুলোয় হাহাকার পড়েছে ত্রাণের জন্য। বেশিরভাগ জেলায় বরাদ্দেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে সরকারি সহায়তা। দুর্গতরা পড়েছেন খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে। অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। তারা ত্রাণের জন্য ছুটছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা তাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বলছেন, বন্যাকবলিত মানুষের নামের তালিকা তৈরির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

এদিকে দ্বিতীয় দফা বন্যায় গতকাল পর্যন্ত ২০ জেলার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তাদের মধ্যে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৬ জনকে ৯৭৩ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে সর্বশেষ বন্যাপরিস্থিতি নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানের বন্যাপরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রাখছি। এসব দেশে বন্যা হলে স্বাভাবিকভাবেই ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের ওপর এর প্রভাব পড়বে। সে অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।

সেনাবাহিনীর আরও সদস্য মোতায়েন

উত্তরাঞ্চলের বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনীর আরও সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে গত শনিবার থেকে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, রংপুর জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের সাহায্যে মাঠে নেমেছেন সেনাসদস্যরা। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে যে কোনো সময় সেনাবাহিনীর আরও সদস্য দুর্গত এলাকায় দ্রুততম সময়ে উদ্ধার ও বাঁধরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী সার্বিক বন্যাপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। সোমবার সকালে স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে গাইবান্ধা সদরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার বাঁধ পুনর্নির্মাণে সেনাবাহিনীর ৩ প্লাটুন সদস্য, ৫টি স্পিডবোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্ধারসামগ্রী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৯ পদাতিক ডিভিশন থেকে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষক দল সোমবার সিরাজগঞ্জের জেলার বন্যাদুর্গত এলাকা কাজিরপুর উপজেলার বাহুকায় যায় এবং দুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণ করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পানিতে ভাসছে দেশের উত্তরাঞ্চল, ভয়াবহ রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে ঢাকার দিকে

আপডেট টাইম : ০১:৫৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বন্যাপরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সর্বগ্রাসী বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয়।

গতকাল বন্যার পানি বেড়েছে ১৪ জেলায়, কমেছে শুধু পঞ্চগড় জেলায়। পানি বাড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা ব্যারাজ। ডালিয়া পয়েন্টে জারি রয়েছে রেড অ্যালার্ট। রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের সঙ্গে। সরকারি হিসাবেই গতকাল সোমবার পর্যন্ত ২০ জেলায় বন্যায় পৌনে ছয় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যাজনিত কারণে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 তবে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বন্যাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ১৬ জন, লালমনিরহাটে ৭, কুড়িগ্রামে ৬, নীলফামারীতে ১, জয়পুরহাটে ১, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ১, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ১ ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।

দুর্গত জেলাগুলোয় হাহাকার পড়েছে ত্রাণের জন্য। বেশিরভাগ জেলায় বরাদ্দেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে সরকারি সহায়তা। দুর্গতরা পড়েছেন খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে। অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। তারা ত্রাণের জন্য ছুটছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা তাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বলছেন, বন্যাকবলিত মানুষের নামের তালিকা তৈরির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

এদিকে দ্বিতীয় দফা বন্যায় গতকাল পর্যন্ত ২০ জেলার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তাদের মধ্যে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৬ জনকে ৯৭৩ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে সর্বশেষ বন্যাপরিস্থিতি নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানের বন্যাপরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রাখছি। এসব দেশে বন্যা হলে স্বাভাবিকভাবেই ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের ওপর এর প্রভাব পড়বে। সে অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।

সেনাবাহিনীর আরও সদস্য মোতায়েন

উত্তরাঞ্চলের বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনীর আরও সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে গত শনিবার থেকে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, রংপুর জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের সাহায্যে মাঠে নেমেছেন সেনাসদস্যরা। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে যে কোনো সময় সেনাবাহিনীর আরও সদস্য দুর্গত এলাকায় দ্রুততম সময়ে উদ্ধার ও বাঁধরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী সার্বিক বন্যাপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। সোমবার সকালে স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে গাইবান্ধা সদরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার বাঁধ পুনর্নির্মাণে সেনাবাহিনীর ৩ প্লাটুন সদস্য, ৫টি স্পিডবোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্ধারসামগ্রী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৯ পদাতিক ডিভিশন থেকে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষক দল সোমবার সিরাজগঞ্জের জেলার বন্যাদুর্গত এলাকা কাজিরপুর উপজেলার বাহুকায় যায় এবং দুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণ করে।